শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা ২০২২ || বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা সমূহ

শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা ২০২২

বিনিয়োগের জন্যে শেয়ার বাজারকে একটি ঝুকিপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে শেয়ার বাজার নামটি শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে যান। মনে করেন শেয়ার বাজার হলো সর্বস্ব লুটে নেয়ার ফাঁদ। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই ধারণাটি সত্যি নয়। শেয়ার বাজার মূলত একটি লাভজনক বিনিয়োগ খাত, যদি আপনি সঠিক নিয়মে বিনিয়োগ করতে জানেন।
কিছু নিয়ম রয়েছে যা অনুসরণ করলে এই খাতে আপনার সফলতা অর্জন করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। সবসময় আপডেইটেড থাকুনঃ শেয়ার বাজারে বিফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ এই খাতটি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞতা।
বিনিয়োগের পূর্বে যে সকল বিষয়ে আপনার ধারণা থাকা উচিত তা হলো-
১) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা
২) শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা
৩) বিগত বছরগুলোতে শেয়ার বাজারের অবস্থা
৪) যে সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চান, সে সেক্টরের বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা
৫) বিভিন্ন ক্যটাগরির স্টক সম্পর্কে ধারণা মনে রাখতে হবে, আপনি যখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবেন, তখন আপনিও হয়ে উঠবেন এই খাতের একটি অংশ। তাই এই খাত সম্পর্কে ধারণা থাকাটা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশের দুটো স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ২৮ লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আপডেইটেড থাকার জন্য নিয়মিত চোখ রাখবেন এই দুটো স্টক এক্সচেঞ্জের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে। পোর্ট ফোলিও তৈরী করুনঃ Portfolio Investment-এর মাধ্যমে সহজেই আপনার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন।
যেমনঃ ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ১টি কোম্পানির শেয়ার না কিনে, সে টাকা দিয়ে বরং কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনুন। এতে যে কোন একটি কোম্পানির শেয়ারের দর-পতন ঘটলেও আপনি খুব একটা ক্ষতির মুখোমুখি হবেন না। সবচেয়ে ভাল হয় ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরের মাঝে পোর্ট ফোলিও গড়ে তুললে। যদি আপনার হাতে বিনিয়োগ করবার মতোন যথেষ্ট অর্থ থাকে, তবে কমপক্ষে ৩০টি পোর্ট ফোলিও গড়ে তোলার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা।

দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করুণঃ

শেয়ার কেনার পর তা কমপক্ষে তিন বছর বা আরো বেশি সময়ের জন্য হাতে রাখুন। অনেক সময় হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই তা বিক্রী করে ফেলাটা লাভজনক মনে হতে পারে। তবুও ধৈর্য্য ধরুন, অপেক্ষা করুন সবচেয়ে মোক্ষম সময়টির জন্যে।
বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী ওয়ার্নার বাফেট এটাকেই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ কৌশল বলে মনে করেন।

শেয়ার কেনা-বেচা সংক্রান্ত কিছু টিপস:

১) ভবিষ্যতে একটি শেয়ারের দাম কতো দাঁড়াবে সেটা আগে থেকে অনুমাণ করার চেষ্টা করুন। যেমন ধরা যাক, একটা কোম্পানির স্টক প্রাইজ প্রথম ৪ দিন ১% করে নেমে আসে, ৫ম দিন আবার ১০% বেড়ে যায়। এখানে আপনি ১ম ৪ দিন শেয়ার কিনে ৫ম দিন বিক্রি করে নিশ্চিত লাভ করতে পারবেন। কিন্তু বাংলাদেশের বাজার weak form হওয়ায় এই পদ্ধতি আপনাকে খুব একটা সুবিধা দিবে না।
এখানে স্টক প্রাইজ নির্ধারিত হবে ডিমান্ড-সাপ্লাই নীতি অনুসারে। এখানে সবাই চাইবে ১ম ৪ দিন শেয়ার কিনতে আর ৫ম দিনে তা বিক্রি করতে। ফলে ১ম ৪ দিনে স্টক এর ডিমান্ড বেড়ে যাবে, ফলে দামও বেড়ে যাবে। যদিও বাস্তবে শেয়ার মার্কেটের খবরা-খবর সকল বিনিয়োগকারীদের নিকট পৌছাতে একটু সময় লাগে। আর আপনাকে ঠিক সেই সময়টাকেই কাজে লাগাতে হবে।
২) যদি আপনি লসে থাকেন, তবুও কেনা বেচা বন্ধ করে রাখবেন না। প্রতিদিনই আপনার শেয়ারের দাম ওঠা নামা করছে। আপনি চেষ্টা করুন দিনের সর্বনিম্ন দামে কিনে আপনার আগের শেয়ার সর্বচ্চ দামে বেঁচে দেবার। যাকে নেটিং বা নিটিং বলে।
৩) অনভিজ্ঞ লোকজনের পরামর্শ নিবেন না। সবসময় গুজব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
৪) অধিক লাভের আশায় ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না।
https://www.facebook.com/groups/1259066044108520/
৫) মনবল হারাবেন না। আপনি যদি বুঝে বিনিয়োগ থাকেন তবে আপনার দুঃশ্চিন্তার কিছুই নেই। বাজার দর যতই কমুক সেটা সাময়িক। কোম্পানী আপনাকে বছর শেষে মুনাফা ঠিকই দেবে। হয়তো আপনি অধিক লাভ করতে পারবেন না কিন্তু আপনার টাকা হারিয়ে যাবেনা।
৬) শপিং করতে গেলে যেমন আপনি সারা বাজার ঘুরে ভাল জিনিসটি কেনেন, তেমনি শেয়ার কেনার সময়েও একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ শেয়ার ব্যবসা না বুঝেই বিনিয়োগ করে বসে, আর মাঝখান থেকে লাভবান হয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আপনি যদি এই কয়েকটা নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন, তবে আপনিও হয়ে উঠতে পারবেন এই খাতের একজন দক্ষ বিনিয়োগকারী।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সমস্যা সমূহ

শেয়ারবাজারের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী চান তাদের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পাক। মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পক্ষে তাদের সহজাত একটা ভাবনা কাজ করে। এমনকি শেয়াবাজারে মূল্যের যখন বাব্ল (bubble) তৈরি হয় তখনও তাদের অনেকে চান শেয়ারের মূল্য আরও বাড়ুক। বাব্ল মার্কেট বা অতিমূল্যের শেয়ারবাজারেও অনেকে আরও মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থাপন করেন। কিন্তু বাস্তবতা একদিন আঘাত করবেই। সেই বাব্ল ফেটে যায়। শেয়ারবাজার ক্রাশ (ধস) হতে থাকে। 
এ থেকে কার আগে কে বের হবে, শুরু হয়ে যায় তার তীব্র প্রতিযোগিতা। ওই অবস্থার পতনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকারকে দোষারোপ করা হয়। সরকার বিপদে পড়ে অনেক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে শেয়ারবাজারকে সমর্থন দেয়ার জন্য। এসব পদক্ষেপের মধ্যে থাকে- কম সুদে ঋণ দেয়া, সরকারের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শেয়ার কেনানো, শেয়ার বিক্রির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই ওই অবস্থায় কাজ দেয় না। 
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসে বিরাট ধস নামে। বছর না যেতেই পুরো শেয়ারবাজার নিস্তেজ হয়ে যায়। সস্তায়ও কেউ শেয়ার কিনতে চায় না। মনে হবে ঝড়ের পর সর্বত্র একটা বিধ্বস্ত অবস্থা। অনেক দিন লেগে যায় বিধ্বস্ত শেয়ারবাজারে আবার গতি ফেরত আসতে।
এমন দুটি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা। এক. ১৯৯৬ সালে বাব্লের পর মহাধস। দুই. ২০১০ সালে আবার বাব্ল, আবার ধস। তাই স্থায়ী বিনিয়োগকারীদের কাছে অতি তেজী শেয়ার মার্কেট সবসময় ভয়ের কারণ। ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, অন্যরা যখন অতি উৎসাহী হন শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে তখন তিনি ভীত হন, আর অন্যরা যখন ভীত হন তখন কেনার ক্ষেত্রে তিনি সাহসী হন। এটাই হল স্থায়ী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বড় মূলমন্ত্র। কিন্তু শেয়ারবাজার কোনো যুক্তি মানে না। 
আর শেয়ারবাজার কারও কথামতো চলেও না। শেয়ারবাজার চলে আপন গতিতে। সেই গতির নির্ধারক হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর চাহিদা-সরবরাহ। অন্যদিকে শেয়ারবাজারের বাইরেরও কিছু উপাদান এ বাজারের গতিকে প্রভাবিত করে। সেই উপাদানগুলো তথা ম্যাক্রো অর্থনীতির অন্য উপাদানগুলো- যেমন সুদের হার, মুদ্রার মান বা বিনিময় হার, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি, রফতানি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতি- এসব উপাদান যদি অর্থনীতির সঙ্গে থাকে, তাহলে আশা করা যায় শেয়ারবাজারও ভালো যাবে। সর্বোপরি শেয়ারবাজার কতটা ভালো যাবে তা নির্ভর করে শেয়ারবাজারে কী ধরনের কোম্পানি তালিকাভুক্ত তার ওপর।
আমরা শেয়ারবাজারকে উন্নত ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাই দুই কারণে। এক. এ বাজার হবে ব্যবসার জন্য মূলধন সংগ্রহের মূল উৎস। দুই. এ বাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার হোল্ডিং করে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের সম্পদ ধারণের ঝুড়িকে (Basket) বহুমুখীকরণ (Diversified) করতে পারে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সম্পদ ধারণের সহজ পথ না করে দিলে ওই অর্থনীতিতে পুঁজির বর্ধন (Capital growth) হবে না। অর্থনীতি পুঁজি ও বিনিয়োগ সংকটে ভুগবে। 
পুঁজিবাজার হল বাজার বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির আসল ভিত। এ বাজার বাদ দিয়ে একটা বাজার অর্থনীতির অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। আমরা বহুদিন লস করে ফেলেছি আমাদের অর্থনীতিকে পুঁজি আহরণের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারমুখী করতে। পুঁজির জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর অতি নির্ভরতা আমাদের বর্তমান বিপদের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। অনেক সরকারি সম্পদ আছে যেগুলো কোনো রকমের আয়ও উৎসারিত করে না। অথচ বছরের পর বছর আমরা ওইসব সম্পদকে সরকারি মালিকানায় রাখার জন্য অতি উৎসাহী। সরকারের নাকি অর্থের অভাব আছে। 
বর্তমানে পাবলিক সেক্টরে যেসব অলস সম্পদ আছে ওইসব সম্পদের যদি ২০-২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সরকার বিক্রি করে, তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা পেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার সম্পদ ও আয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জ্ঞানের ঘাটতিতে ভুগছে। শেয়ারবাজার বা সম্পদে জনগণের মালিকানা বিস্তৃত হতে পারে যদি সরকার তার বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো থেকে আরও কিছু শেয়ার বিক্রি করে।
আজকে শেয়ারের মূল্যসূচক অনেক তলানিতে। এ নিয়ে অনেকে আক্ষেপ করছেন। আক্ষেপ আমার মতো অনেকেরই আছে। কিন্তু এ অবস্থার সমাধান কী? সমাধান হতে পারে পড়তি বাজারকে আরও পড়তে দেয়া। একসময়ে শেয়ার যখন আরও সস্তা হয়ে যাবে তখন অনেকে ক্রেতা হয়ে ওইসব শেয়ার কিনে নেবে। শেয়ারবাজারের পড়ারও একটা সীমা আছে। 
আমরা জানি না বর্তমানের মূল্যস্তরই শেষ মূল্যস্তর বা পতনের শেষ সীমা কিনা। এটা কেউই বলতে পারবে না। তবে সরকার এ ক্ষেত্রে যা করতে পারে এবং করা উচিত বলে আমরা মনে করি তা হল, বাজারে ভালো শেয়ার আনার জন্য দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমাদের বিশ্বাস, সরকার এ উদ্যোগ নিলে সফল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও ফেরত আসবে।
পাকিস্তানের অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের অর্থনীতির আকারের চেয়ে ছোট। কিন্তু ওদের করাচি স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সমৃদ্ধ। এর মূল কারণ হল, করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে, যেগুলো ঢাকার শেয়ারবাজারে নেই। উদাহরণস্বরূপ- ইউনিলিভার, নেসলে, সিমেন্স, পালমোলাইভ, সানোফি-অ্যাভেনটিস ইত্যাদি। 
অথচ এসব কোম্পানি আমাদের অর্থনীতিতেও ভালো ব্যবসা করছে, শুধু তারা আমাদের শেয়ারবাজারে নেই। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি কোনো দিন ভালোভাবে চিন্তা করে দেখেছেন কেন এসব কোম্পানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নেই? সরকার এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এমনিতেই ঘুরে দাঁড়াবে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে শেয়ারবাজার নিয়ে কী করা যেতে পারে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটা ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। 
এর মধ্যে আছে রেগুলেটর বিটিআরসি আর গ্রামীণফোনের (জিপি) মধ্যে পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের নিরসন করা। গ্রামীণফোন একটা পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি, যে কোম্পানির শেয়ার কিনেছে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ। আজ শুধু এ দ্বন্দ্বের কারণে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসে বড় রকমের ফাটল ধরেছে। সরকার যদি বুঝত শুধু এ দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের শেয়ারবাজার বা বাংলাদেশের অর্থনীতি কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তাহলে এ বিরোধটা অনেক আগেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যেত। যে অর্থ সরকার গ্রামীণফোনের কাছে পাবে বলছে, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ সরকার হারাচ্ছে শুধু এর শেয়ার মূল্যে ধস নামার কারণে। 
এসব ক্ষতি আমলে নিতে এ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যেন একেবারেই নারাজ! শুধু বিটিআরসি-জিপির বিরোধটির গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়ে গেলে শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক অনেক বেড়ে যেত।
তবে আমরা এ ক্ষেত্রেও আশাবাদী। শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক তলানিতে পড়ে যাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ভেবেছেন এবং এ বাজারে বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ছয়টি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। 
এসব নির্দেশনার মধ্যে একটি নির্দেশনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তা হল বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমরা আশা করছি, যেহেতু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন একটি ইচ্ছা ব্যক্ত করা হয়েছে, সেহেতু বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। 
তবে এ ক্ষেত্রেও আমাদের শঙ্কা হল, ওইসব কোম্পানি এমনি এমনি বাজারে তালিকাভুক্ত হবে না। তারা যাতে আইপিও বিক্রি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দৃশ্যমান উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী অন্য আরেকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন, তা হল সরকারের লাভজনক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা। এ ক্ষেত্রে পরিতাপের বিষয় হল, গত ১১ বছর ধরে সরকারি শেয়ারগুলো বাজারে ছাড়ার কথা বলা হলেও শুধু কিছু লোকের স্বার্থের কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। 
এ ক্ষেত্রেও আমরা আশা করি এবার কাজ হবে। সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে যারা নানাবিধ কথা বলে বাধা দেবে, তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, সূচকের পতন-উত্থান সাময়িক এবং তা হতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও মজবুত তা নির্ভর করবে কতটা ভালো কোম্পানির শেয়ার এ বাজারে তালিকাভুক্ত আছে তার ওপর।

শেয়ার বাজারের জুয়াড়ীদের কৌশল এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ

বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত জানুয়ারি মাসেই এক লক্ষ পনের হাজার নতুন বিও একাউন্ট (শেয়ার লেন-দেনের জন্য একাউন্ট) খোলা হয়েছে। বর্তমানে মোট বিও একাউন্ট এর সংখ্যা ২৮ লক্ষ। রাজধানীর চাকুরীজীবি ও ছাত্র থেকে শুরু করে মফ:স্বল শহরের ব্যবসায়ী, উকিল এমনকি গ্রামের অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। ইন্টারনেটের বিস্তৃতি, ব্যাংক সুদের হার কমে যাওয়া বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। 
এই সকল বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগই শেয়ার বাজারে টাকা ঢালছেন এ বিষয়ে কিছু না জেনেই, শুধুমাত্র তাদের পরিচিত কেউ অল্প সময়ে প্রচুর লাভ করেছেন এই ধরণের কথা শুনে। তারা লেনদেনও করছেন কোম্পানীগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর না নিয়ে, শুধুমাত্র পরিচিত কোন ব্যক্তির পরামর্শে। এই ধরণের বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ লাভবান হলেও, অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
কোন কোম্পানীর শেয়ার আপনি কেনার অর্থ হচ্ছে, সেই কোম্পানীর একটি অংশের আপনি মালিক হলেন। এখন উক্ত কোম্পানী যদি ব্যবসায়ে লাভ করে তাহলে তার লভ্যাংশ আপনি পাবেন এবং লোকসান দিলে তার ভাগও আপনাকে নিতে হবে। একটি কোম্পানীর আর্থিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তার শেয়ারের দাম ওঠা-নামার কথা। শেয়ার মার্কেটে নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করে থাকে। তার ভিত্তিতেও শেয়ারের দাম বাড়ে-কমে। আবার কোন কোম্পানী যদি তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করে, তাহলে তার শেয়ারের দাম বাড়তে পারে।
তবে, আমাদের শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোম্পানীর আর্থিক অবস্থার সম্পর্ক থাকে না। প্রকৃতপক্ষে শেয়ার বাজারের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় এক ধরণের জুয়াড়ীদের দ্বারা। তাদের কাজের কৌশল অনেকটাই নীচের মত:
১. একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোন কোম্পানীর শেয়ার একসাথে কিনে তার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ধরুন প্রত্যেকে এক কোটি টাকা নিয়ে দশজন জুয়াড়ী একদিন একটা কোম্পানীর শেয়ার নিয়ে খেলতে বসলো। ধরুন উক্ত শেয়ারটির গতদিনের বাজার মূল্য ছিল ১০০ টাকা। একজন দাম হাকলো ১০২ টাকা। অপর ব্যক্তিটি তা ১০২ টাকা দিয়ে কিনে নিলো। অপরজন হাকলো ১০৪ টাকা। এভাবে একদিনেই ১০০ টাকার শেয়ার সহজেই ১১০ টাকা হয়ে যাবে। 
ততোক্ষণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও জেনে যাবে যে একটি শেয়ারের দাম খুব বাড়ছে। তখন তারাও শেয়ারটি কেনা শুরু করবে। এভাবে ৩-৪ দিন বাড়তে থাকার পর জুয়াড়ীরা সেই শেয়ার বিক্রি করা শুরু করে। তাদের টাকা উঠে আসার পর উক্ত কোম্পানীর শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। ফলে পরে যারা বেশী দামে কিনেছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
২. জুয়াড়ীরা একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। যেহেতু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সিংহভাগ লেনদেন করে অন্যের পরামর্শে, তাই এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত কয়েক হাজার বিনিয়োগকারীর নিকট খবর পৌছে যায় যে, ওমুক কোম্পানীর শেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে বেড়ে যাবে। হাজার খানেক বিনিয়োগকারী যখন কোন শেয়ারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, তখন সেই শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। জুয়াড়ীদের টাকা তুলে নেয়ার পর আবার তার দাম পড়তে থাকে।
৩. অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন কোম্পানীও তার শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে গুজব ছড়ায়। বিভিন্ন সময়ে এই ধরণের গুজবের জন্য শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ধরণের কোম্পানীর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ:

জুয়াড়ীদের খপ্পড় থেকে বেঁচে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিম্নোক্ত পথ অনুসরণ করতে পারেন।
১. স্বল্প মেয়াদে বেশী লাভ করার প্রবণতা বাদ দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে (৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য) বিনিয়োগ করুন। এতে অল্প দিনে কোটিপতি না হতে পারলেও দীর্ঘদিনের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসতে হবে না।
২. সবথেকে বেশী সতর্ক থাকতে হবে শেয়ার কেনার সময়। মনে রাখতে হবে শেয়ার না কেনা অনেক সময় বেশী লাভ জনক। প্রকৃতপক্ষে তারা বেশী লাভবান হতে পারে যারা শিকারীর মত চুপ করে টাকা নিয়ে বসে থাকে এবং যখন কোন কারণে বাজার পড়ে যায়, তখন পছন্দের শেয়ারটি কেনে।
৩. প্রশ্ন হচ্ছে, কোন শেয়ারটি কিনবেন? প্রথমে ভালো আর্থিক অবস্থার কয়েকটি কোম্পানীর তালিকা করতে হবে। এই তালিকাটি করবেন কিভাবে? এর জন্য কয়েকটি কাজ করা যায়:
ক. পরিচিতজনের মধ্যে যারা শেয়ার বাজার বোঝে তাদের সাথে কথা যেতে পারে। তাদেরকে বলতে হবে, এমন কোম্পানীর নাম বলুন যাতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা যায় এবং যারা শেয়ার নিয়ে জুয়া খেলে না।
খ. স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইটে কোম্পানীগুলোর বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। বছরের বিভিন্ন সময়ে দামের হ্রাস-বৃদ্ধির গ্রাফ দেখুন, বিগত বছরগুলোতে কোম্পানীটি কত লাভ করেছে এবং কত লভ্যাংশ দিয়েছে ইত্যাদি জেনে নিন। স্থিতিশীল কোম্পানীগুলো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে না। এসব কোম্পানীর শেয়ারের দাম সাধারণত: বছরে এক-দুইবার (অর্ধবার্ষিক হিসাব প্রকাশ ও বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণা) বৃদ্ধি পায়।
গ. স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইটে কোম্পানীগুলোর প্রতিদিনের খবর দেওয়া থাকে, যা শেয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। এই খবরগুলো নিয়মিত পড়লে লাভজনক কোম্পানী বাছাই করা সহজ।
৪. বাছাইকৃত কোম্পানীর একটি তালিকা তৈরী করার পর নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকুন সেগুলোর শেয়ারের মূল্য সম্পর্কে। ইন্টারনেটে প্রতি ৫ মিনিট পর পর শেয়ারের মূল্য দেখানো হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে কোন কোম্পানীর শেয়ারের মূল্য কমে যেতে পারে। কখনো বা পুরো বাজারের দর পতন হয়। লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারের দাম সাধারণত: পড়ে যায়। আবার ঈদের ছুটির আগে দাম পড়ে যায়। কখনো দেখা যায় বড় কোন কোম্পানীর শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে বা ভিন্ন সেক্টরের কোম্পানীগুলোর দাম বাড়তে থাকলে অন্য কোম্পানীর শেয়ারের দাম কমে। এই রকম সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকা ভালো এবং তখন শেয়ার কিনলে বেশী লাভ করা যায়।
৫. আপনি যে কয়েকটি কোম্পানীর শেয়ার কিনেছেন, সেগুলোর দাম এবং সেগুলো সম্পর্কে কোন খবর প্রকাশিত হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন। এ উদ্দেশ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েব সাইট সাহায্য করতে পারে। যেহেতু শেয়ারের দাম ওঠা-নামা করে, তাই নিয়মিত খোঁজ-খবর না রাখলে আপনি লাভের সুযোগ হারাতে পারেন।
৬. আপনার কেনা শেয়ারের দাম যদি হঠাৎ কমে যেতে থাকে, তাহলে ভয় পেয়ে ক্ষতিতে বিক্রি না করে দাম পড়ার কারণ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। অনেক ক্ষেত্রে পুরো শেয়ার বাজারে মন্দাভাব থাকতে পারে, বা অন্য সেক্টরে দাম বাড়ার কারণে আপনার শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধারণ করে অপেক্ষা করুন এবং ভালো দাম পেলে বিক্রি করে দিন।
শেয়ার বাজারে যেহেতু বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঢুকছেন এ বিষয়ে কোন কিছু না জেনেই, তাই সরকারের উচিৎ শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশী জানার ব্যবস্থা করা এবং এ সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো। তা না হলে এটি পরিণত হবে আরেকটি বড় জুয়ার বাজারে যেখানে দেশের ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব হারাবেন।
❤️

Click here to Get Code
Loading… 5 Post Automatically

https://mehenajteam.xyz/2022/11/how-costly-is-austria.html

Leave a Comment