আল্প আরসলান বুয়ুক সেলজুকলু বাংলা সাবটাইটেল ভলিউম ০৬
বারবারোসা বাংলা সাবটাইটেল |
বারবারোসা সিরিজ ভলিউম ৩ |
আল্প আরসালান ভলিউম ৫ |
বুয়ুক সেলজুক বাংলা সাবটাইটেল ২৪ |
বুয়ুক সেলজুক বাংলা সাবটাইটেল ২৭ |
উয়ানিস বুয়ুক সেলজুকলু ভলিউম ২০
সুলতান আল্প আরসালানের জীবনী (ফার্সি :بیگ آلپ ارسلان ālp arslān; আরবি: الب ارسلان بیگ alb arslān), আসল নামঃ- মুহাম্মদ বেগ বিন দাউদ চাগরী । তিনি সেলজুক রাজবংশের তৃতীয় সুলতান এবং সেলজুকের প্রপৌত্র। তার সময় থেকেই সেলজুক বংশ রাজবংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার সামরিক দক্ষতা, বীরত্ব এবং লড়াইয়ে পারদর্শিতার জন্য তিনি আল্প আরসালান উপাধি লাভ করেন। তুর্কি ও তুর্কমেন ভাষায় এর অর্থ “বীর সিংহ”। কর্মজীবন পিতা চাগরী বেগের মৃত্যুর (১০৫৯ খ্রিষ্টাব্দ) পর তিনি খোরাসানের শাসক হন। তার চাচা তুঘরিল বেগের মৃত্যুর পর আল্প আরসালানের ভাই সুলাইমান তুঘরিল বেগ এর উত্তরাধিকারী হন। আরসালান ও আরেক চাচা কুতালমিশের মধ্যে এই উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই হয়। আল্প আরসালান কুতালমিশকে পরাজিত করেন এবং ১০৬৪ সালের ২৭ এপ্রিল সেলজুকদের সর্বাধিনায়ক হন এবং মহান সেলজুক রাজবংশের সুলতান হন খলীফা কর্তৃক সুলতান উপাধি, বিশেষ ক্ষমতা ও সুযোগ লাভ করেন। এবং আমুদরিয়া থেকে টাইগ্রিস পর্যন্ত পারস্যের একচ্ছত্র সম্রাট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। আল্প আরসালন খাজা হাসান নামক জনৈক পন্ডিত ব্যক্তিকে নিযামুল মুলক ( রাজ্যের সংগঠক ) উপাধি প্রদান করে তার উজিরে আযম নিযুক্ত করেন। আল্প আরসালান তার উজির নিজামুল মুলকের সাহচর্যে রাজ্যপরিচালনা করতেন। নিযামুল মুলক মুসলিম ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। আল্প আরসালান তার সন্তান প্রথম মালিক শাহকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। কাপাডোকিয়ার রাজধানী কায়সারিয়া মাযাকা দখল করার উদ্দেশ্যে তার বাহিনী ইউফ্রেটিস পার হয়ে শহর আক্রমণ করে। সুলতান স্বয়ং বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি আর্মেনিয়া ও জর্জিয়ার দিকে অগ্রসর হন। নতুন সুলতান আল্প আরসালান তার রাজত্বের দ্বিতীয় বর্ষে ১০৬৪ সালে রোমানদের অধিকারভুক্ত জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া জয় করে স্বীয় রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেন। বাইজেন্টাইন প্রতিরোধ
তুগ্রীলের সময় মুসলমানদের সাথে বাইজেন্টাইনদের যে সংঘর্ষের সূচনা হয় আল্প আরসালানের সময় তা চরম আকার ধারণ করে। তুগ্রীল বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদেরকে কাপাসোডিয়া ও ফ্রিজিয়া হতে বিতাড়িত করেন। ১০৬৮ সালে সিরিয়া যাত্রাকালে আল্প আরসালান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে আক্রমণ করেন। সম্রাট ৪র্থ রোমানোস ডিয়োজেনেস আক্রমণকারীদের সাথে কিলিকিয়াতে সাক্ষাত করেন। এই দুই বাহিনীর মধ্যে তিনটি মারাত্মক লড়াই সংঘটিত হয়। প্রথম দুইটি সম্রাট নিজে পরিচালনা করেন এবং তৃতীয়টি মানুয়েল কমনেনুস কর্তৃক পরিচালিত হয়। ১০৭০ সাল নাগাদ সেলজুকরা পরাজিত হয় এবং ইউফ্রেটিসের তীরবর্তী অঞ্চলে ফিরে আসে। ১০৭১ সালে রোমানোস আনুমানিক ২০০০০০ সৈন্যের বাহিনী নিয়ে মুসলিম রাজ্য বাগদাদ ধ্বংস ও সমগ্র পশ্চিম এশিয়া পদানত করার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হন। তার বাহিনীতে কুমান তুর্কি, ফ্রাঙ্ক ও নর্মানরাও ছিল। এই বাহিনী উরসেল দা বেইউলের নেতৃত্বে আর্মেনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। আল্প আরসালান মাত্র ৪০০০০ মুজহিদ বাহিনী নিয়ে আল্লাহর নামে তাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং ১০৭১ খ্রীস্টাব্দে ভন লেকের উত্তর দিকের মুরাট নদীর তীরবর্তী মানজিকার্দ নামক রণক্ষেত্রে আল্প আরসালান ও রোমানোসের বাহিনী মুখোমুখি হয়। মানযিকার্টে সুলতান আল্প আরসালান সন্ধির প্রস্তাব করলেও সম্রাট রোমানোস তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়। উভয় দলের মধ্যে এক প্রচন্ড সংঘর্ষ অনুষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধ ইতিহাসে মানযিকার্টের যুদ্ধ বলে পরিচিত। বাইজেন্টাইন বাহিনীর কুমান সৈনিকরা, যারা মূলত ভাড়াটে সৈন্য ছিল, তৎক্ষণাৎ দলত্যাগ করে সেলজুক তুর্কিদের পক্ষে যোগ দেয়। কুমানদের দলত্যাগের ঘটনায় প্ররোচিত হয়ে ফ্রাঙ্ক ও নর্মানরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। ফলে বাইজেন্টাইনরা যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত হয়। এবং রোমান বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে এবং সম্রাট রোমানস বন্দি হয়। সম্রাট নিজ কন্যাগণের সাথে আল্প আরসালানের পুত্রদের বিবাহ দিতে এবং তার বন্দিত্বের মোচনের জন্য খলীফাকে ১০ লক্ষ এবং বার্ষিক কর হিসেবে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করতে এবং সকল মুসলিম বন্দির মুক্তির প্রতিশ্রুতিতে মুক্তিলাভ করেন।
আল্প আরসালানের এই বিজয় নিকট এশিয়ায় সেলজুক তুর্কি ও সুন্নি মুসলিমদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠে। যদিও পরবর্তী চার শতাব্দী পর্যন্ত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য টিকে ছিল এবং ক্রুসেডারদের কারণে মুসলিমরা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মানযিকার্টের যুদ্ধ আনাতোলিয়ায় তুর্কিদের অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক হয়ে উঠে। এডওয়ার্ড গিবনসহ অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তার মতে মানযিকার্টের পরাজয় হল পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা। বাইযান্টাইনদের কাছ থেকে আনাতোলিয়া অধিকারের ঘটনা ক্রুসেডের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়। আল্প আরসালানের মহত্ব বর্ণিত আছেঃ- মানযিকার্টের যুদ্ধের পর যখন ৪র্থ রোমানোস সম্রাট রোমানোসকে বন্দী অবস্থায় আল্প আরসালানের সামনে আনা হয়। আল্প আরসালান তার সাথে সদয় আচরণ করেন। নিম্নোক্ত আলাপ তাদের মধ্যে হয়েছিল বলে কথিত আছে : আল্প আরসালান: যদি আমাকে আপনার সামনে বন্দী হিসেবে আনা হত তবে আপনি কী করতেন? রোমানোস: হয়ত আমি আপনাকে হত্যা করতাম অথবা কন্সটান্টিনোপলের রাস্তায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতাম। আল্প আরসালান: আমার শাস্তি এর চেয়েও কঠিন। আমি আপনাকে ক্ষমা করেলাম এবং আপনি মুক্ত। ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর আল্প আরসালানকে “উদার, মহানুভব, ন্যায়পরায়ণ ও জ্ঞাণী শাসক, জীবন-যাপনে পবিত্র, ধার্মিক ও খোদাভক্ত, দয়ালু, দানশীল, দরিদ্রের বন্ধু, নিন্দনীয় কার্যকলাপ হতে পরাঙ্মুখ এবং সর্বদা সাহসী ও বিক্রমশাল “ বলে বর্ণনা করেছেন। এক কথায় তার মনোবল, ধর্মবল এবং বাহুবল সমান ছিল। তিনি প্রজাহিতৈষী এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি মার্ভ হতে ইসপাহানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। দুর্বল আব্বাসী খলিফার সাথে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। রাষ্ট্রীয় কাঠামো আল্প আরসালানের কর্তৃত্ব সামরিক ক্ষেত্রে সীমিত ছিল। রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কাজ তার উজির নিযামুল মুলক নিয়ন্ত্রণ করতেন। নিযামুল মুলক বিভিন্ন প্রশাসনিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত সামরিক জায়গীর প্রথা যাযাবর তুর্কিদের পারসিক, তুর্কি ও সেলজুক অঞ্চলের অন্যান্য সংস্কৃতির সম্পদের দিকে টেনে আনতে সমর্থ হয় এবং আল্প আরসালানকে একটি বিশাল বাহিনীর ভরণপোষণে সমর্থ করে তোলে।
আল্প আরসালান তার ভ্রাতুষ্পুত্র সুলাইমান ইবনে কুতালমিশ যিনি ছিলেন আরসালানের ক্ষমতার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীর পুত্র। তাকে নব অধিকৃত রাজ্য এশিয়া মাইনরের শাসনকর্তা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশের শাসক নিযুক্ত করা হয় এবং আনাতোলিয়ায় বিজয় সম্পন্ন করার ভার অর্পণ করা হয়। এই কাজে তাকে নিযুক্ত করার কারণ, আল্প আরসালান ও কুতালমিশের মধ্যকার যুদ্ধে উপস্থিত ইবনে আল আসিরের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়। তিনি লিখেছেন যে, আল্প আরসালান কুতালমিশের মৃত্যুর জন্য কেঁদেছিলেন এবং আত্মীয় হারানোর কারণে গভীরভাবে শোকাহত ছিলেন। সুলাইমান ও তার উত্তরাধিকারিগণ ‘রোমের সেলজুক’ নামে পরিচিত।
মৃত্যু মানযিকার্টের যুদ্ধের পর আল্প আরসালান পশ্চিম এশিয়ার অধিকাংশ অধিকার করেন। এরপর তিনি তার পূর্বপুরুষদের অঞ্চল তুর্কিস্তান অধিকার করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি আমু দরিয়ার দিকে যাত্রা করেন। নদী পার হওয়ার আগে কিছু দুর্গ দখল করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তারমধ্যে একটি বেশ কয়েকদিন ধরে ইউসুফ আল-হারেযমি প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মসমর্পণে বাধ্য হন এবং সুলতানের সামনে তাকে আনা হয়। সুলতান তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। ইউসুফ তৎক্ষণাৎ তার ছুরি বের করে সুলতানের উপর হামলা চালান। এর চার দিন পর ১০৭২ সাল আরসালান মৃত্যু বরণ করেন। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন তিনি তৎক্ষণাত মৃত্যুবরণ করেন। মার্ভে তার পিতা চেগরী বেগের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার সমাধিতে লেখা রয়েছে: “যারা সুলতান আল্প আরসালান বেগ’র আকাশসম জাকজমক দেখেছ, দেখ, তিনি এখন কালো মাটির নিচে শায়িত…”। |